বিদআত কি এবং এর ভয়াবহ পরিণাম
বিদআত HR Harun Ahmed |
নিজে বাঁচুন এবং আপনার পরিবার বর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান
হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার। (সূরা আল ইমরানঃ ২০০)
what is bidat? বিদআত শব্দের আভিধানিক অর্থ = নতুন আবিষ্কার। শরিয়াতের পরিভাষায় বিদআত হচ্ছে ধর্মের নামে নতুন কাজ, নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা।
নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীতের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম-৩২৪৩)
রাসূল (সাঃ) আরো বলেন- "নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাব, সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এবং প্রত্যেক বিদ'আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা। (মুসলিম-৭৬৮)
"রাসুল (সাঃ) আরো বলেছেন, যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (বুখারীঃ ৫০৬৩)
অর্থাৎ যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নতুন নতুন ইবাদাত আবিষ্কার করবে অথবা আল্লাহ্র নৈকট্যের জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করবে সে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতিকে তুচ্ছ মনে করল।
যে কোন সাধারন মানুষকে যদি জিজ্ঞাস করা হয় যে- আল্লাহ্ যথাযথ ইবাদের জন্য এবং আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের জন্য রাসুল (সাঃ) এর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহ উত্তম নাকি কোন বড় আলেমের দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহ উত্তম? নিঃসন্দেহে রাসুল (সাঃ)-এর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি-ই এবং ইবাদাত সমূহ-ই উত্তম হবে। অতএব কেউ যদি আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর রাসুল (সাঃ)-এর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহকে উত্তম মনে না করে, বর্তমান যুগের আলেমদের দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এবং ইবাদাত সমূহকে উত্তম মনে করে তবে উপরের হাদিস অনুযায়ী সেই ব্যক্তি আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মত-ই থাকবে না। তাহলে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মত-ই থাকবে না, কিয়ামতের দিন তার সুপারিশের কি অবস্থা হবে? তাকে কি আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন?
এবার আসুন বিদআত সমূহ চিহ্নিত করার চেষ্টা করিঃ দ্বীনের মধ্যে বিদআত মূলত দু’প্রকার।
(১) বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত।
(২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত।
বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআতঃ
ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে ঈমান, তথা বিশ্বাস। যে যে বিষয়য়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয় সেই সব জিনিষের সাথে যদি আরো নতুন নতুন বিষয় বিশ্বাস করা হয় তবে সেটাই হবে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত। বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত হচ্ছে ঐ সমস্ত বিদআত যে গুলো নাবী (সাঃ) ঈমান আনার জন্য বিশ্বাস করতে বলেন নি, যে সকল বিশ্বাস সাহাবায়ে কেরাম করতেন না। যেমনঃ আল্লাহ্ নিরাকার, আল্লাহ্ সর্বাস্থানে বিরাজমান, রাসূল (সাঃ) নূরের তৈরী, নাবী (সাঃ)-কে সৃষ্টি না করলে কিছুই আল্লাহ্ সৃষ্টি করতেন না ইত্যাদি সব-ই বাতিল আকীদা সমূহ। এই ধরণের নতুন নতুন আকিদাই হচ্ছে- বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত।
আমলের ক্ষেত্রে বিদআতঃ
যেহেতু বিদআত মানেই হচ্ছে এই শরিয়াতে নতুন নতুন আবিষ্কার করা তাই আমলের ক্ষেত্রেও রাসূল (সাঃ) যে সলক আমল করতে নির্দেশ দেননি, সাহাবায়ে কেরামগণ যে সকল আমল করেন নি বা করতেন না, বর্তমান যুগের সেই সমস্ত আমলই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। এটা আবার কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-
(১) নতুন কোন ইবাদত আবিষ্কার করা।
(২) শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে বৃদ্ধি করা।
(৩) যেকোন একটি ইবাদত রাসুল (সাঃ) এর পন্থায় আদায় না করে নতুন, বিদআতী নিয়মে পালন করা এবং
(৪) শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করা, যা শরীয়তে নির্ধারিত নয়।
নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা ইসলামী শরীয়তের সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা মহান আল্লাহ্ বলেন, "আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। (সূরা আল মায়েদা-৩)
উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, দ্বীন পূর্ণাঙ্গ। পূর্ণাঙ্গ কোন জিনিষের ভিতরে নতুন করে কিছু ঢোকানোর থাকে না। একটি গ্লাসে যদি পানি পরিপূর্ণ থাকে তবে সেখানে কি নতুন করে পানি দেয়া যাবে? আল্লাহ্র দ্বীন পরিপূর্ণ। কেউ যদি এই দ্বীনের মধ্যে নতুন ইবাদাত সংযুক্ত করে তবে সে যেন মনে করছে দ্বীন পরিপূর্ণ নয়, দ্বীনের মধ্যে আরো কিছু বাকী আছে। এজন্যই যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন ইবাদাতের অবতারণা করল সে মূলত আল্লাহ্কে অপমানিত করল।
মহান আল্লাহ্ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না। (সুরা মুহাম্মাদঃ ৩৩)
তাই আল্লাহ্ যা বলেছেন ঠিক তাই করতে হবে, রাসূল (সাঃ) যা বলেছেন ঠিক তাই করতে হবে, এর উল্টা-পাল্টা করলে কোন আমল তো কবুল হবেই না বরং তা বিনষ্ট হয়ে যাবে, উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ্ একথাই বলেছেন।
মহান আল্লাহ্ আরো বলেন, "মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রসূলের চেয়ে আগে বাড়িও না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সুরা হুজুরাত-১)
তাই আমাদের কখনোই উচিৎ হবে না রাসুল যা দিয়েছেন তা বর্জন করে নিজে নতুন কিছুর অবলম্বন করা। রাসুল যা করেছেন তার চেয়ে আগে বেড়ে যাওয়া। রাসুলে পদ্ধতি বাদ দিয়ে ইবাদাত করলে তা গ্রহনযোগ্য হবে না। বুক ফাটিয়ে কান্না-কাটি করে ইবাদাত করলেও তা কবুল হবে না।
নাবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীতের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম-৩২৪৩)
তাই আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর পদ্ধতিতেই ফিরে আসতে হবে, উনার পদ্ধতিই যে আলেমের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ।
মহান আল্লাহ্ বলেন, "যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সুরা আল আহযাব-২১)
উল্লেখ্য যে, বিদআত হচ্ছে সেটাই যেটাকে দ্বীনের অংশ মনে করে করা হয় এবং নেকীর আশায় করা হয়।
বিদআতের কতিপয় উদাহরণঃ
যেমন কোন ব্যক্তি আছর কিংবা যোহরের নামায এক রাকাত বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে আদায় করল। শরীয়ত সম্মত ইবাদাত বিদআতী নিয়মে পালন করা। যেমন হাদীছে বর্ণিত জিকিরের বাক্যগুলি দলবদ্ধভাবে সংগীতাকারে। উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করা। কিংবা ইবাদত পালনে নফসের উপর এমন কষ্ট দেয়া, যা রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাতের বিরোধী।
শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে এমন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে আদায় করা, যা শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। যেমন, শাবান মাসের ১৫ তারিখ দিনের বেলা রোজা রাখা এবং রাতে নির্দিষ্ট নামায আদায় করা। মূলতঃ রোজা ও নামায শরীয়ত সম্মত ইবাদত। কিন্তু ইহাকে নির্দিষ্ট সময়ের সাথে খাছ করার কোন দলীল নেই। রোজা নির্দিষ্ট মাস এবং নামায নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিটি ইবাদত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হবে। কিন্তু শাবান মাসের ১৫ তারিখে শব-ই-বরাত নাম দিয়ে দিনের বেলা রোজা রাখা এবং সারা রাত নফল নামায আদায় করা নিশ্চিতভাবে বিদআত। কারণ এ সম্পর্কে কোন সহীহ দলীল নেই।
বিদআত সম্পর্কে আমাদের মাঝে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। বিদআত জিনিষটা যে আসলে কি তা অধিকাংশ মুসলিমরা-ই বুঝে না। এমন অনেক আলেম-ওলামাও বিদআতের সঠিক দিক-নির্দেশনাই বুঝতে ভুল করে। কোন কোন বিষয় গুলো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে আর কোন কোন বিষয় গুলো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে না, এই বিষয়টি বুঝতে না পারার কারনে তারা এখতেলাফ করতে শুরু করে যে- এটা বিদআত হলে ওটা বিদআত হবে না কেন? এটা বিদআত হলে সেটা বিদআত হবে না কেন ইত্যাদি ইত্যাদি?
তাই বিদআত আসলে কোনটা তা চিহ্নিত করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বিদআত হচ্ছে সে আমলটাই যার কোন দলিল কুরআন ও সহিহ হাদিসে নেই, কুরআন ও সহিহ হাদিসে না থাকার পরও যদি কেউ কোন আমল করে তবে সেটাই হবে বিদআত।
উদাহরণ স্বরূপঃ
কুরআন ও হাদিসে দৈনিক ১০ ওয়াক্ত সালাতের কথা কোত্থাও নেই, এখন যদি কেউ দৈনিক ১০ ওয়াক্ত সালাতের প্রচলন করে তবে সে বিদআত করল। আরো যেমন, কেউ যদি খতমে ইউনুস করে তবে সে বিদআত করল। কেননা এই আমলের কথা কুরআন ও হাদিসের কোত্থাও নেই। রাসূল (সাঃ) এমন আমলের কথা কখনো বলেননি। মৃতের জন্য সুরা ফাতেহা ও সুরা ইখলাস, সুরা ইয়াসিন পাঠ করে নেকি পৌঁছানো। কেননা এমন কথাও কুরআন ও হাদিসের কোত্থাও নেই। অনেক সময় কাউকে যদি বলা হয় যে এই জিনিষটা বিদআত, তখন সে প্রশ্ন করে এটা যে বিদআত এমন কথা কুরআন-হাদিসের? এটি বোকার মত প্রশ্ন। বিদআত হচ্ছে সে আমলটাই যার কোন দলিল কুরআন ও সহিহ হাদিসে নেই, কুরআন ও সহিহ হাদিসে না থাকার পরও যদি কেউ কোন আমল করে তবে সেটাই হবে বিদআত। তাই ঐ সব আমল কুরআন-হাদিসে আসবে কোত্থেকে?
দ্বীনের মধ্যে বিদআতের বিধানঃ
দ্বীনের ব্যাপারে সকল প্রকার বিদআতই হারাম ও গোমরাহী। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَة
অর্থঃ তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা।
উপরের হাদীছগুলোর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের মধ্যে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই হারাম ও গোমরাহী। তবে এ হারাম বিদআতের প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বিদআতের কিছু কিছু প্রকার প্রকাশ্য কুফরীরই নামান্তর। যেমন কবরবাসীদের নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে কবরের চতুর্দিকে কাবা ঘরের তাওয়াফের ন্যায় তাওয়াফ করা, কবরের উদ্দেশ্যে পশু যবাই করা, নযর-মান্নত পেশ করা, কবরবাসীর কাছে দু’আ করা, তাদের কাছে আশ্রয় চাওয়া ইত্যাদি। এমন কিছু বিদআতও রয়েছে, যা শির্ক না হলেও মানুষকে শির্কের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করা, কবর উঁচু করা, পাকা করা, কবরের উপর লিখা, কবরের কাছে নামায আদায় করা, দু’আ করা ইত্যাদি।
একটি সতর্কতাঃ
আমাদের দেশের কিছু কিছু বিদআতি আলেম বিদআতকে জায়েজ করার জন্য বিদাতে হাসানা এবং বিদাতে সাইয়েআ এদু’ভাগে ভাগ করে থাকে। বিদআতকে এভাবে ভাগ করা সম্পূর্ণ ভুল এবং রাসূল (সাঃ)এর হাদীছের সম্পূর্ণ বিপরীত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। আর এই শ্রেণীর আলেমগণ বলে থাকে, প্রত্যেক বিদআত গোমরাহী নয়। বরং এমন কিছু বিদআত রয়েছে, যা হাসানা বা উত্তম বিদআত।
আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) বলছেন- “প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী” এখানে আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) প্রত্যেক বলেছেন, কতিপয় বলেন নি। সুতরাং বিদআতে হাসানার পক্ষে মত প্রকাশকারীদের কোন দলীল নেই। কিছু লোক তারাবীর নামাযের ব্যাপারে উমার (রাঃ) এর উক্তি “এটি কতই না উত্তম বিদআত ” এ কথাটিকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। তারা আরও বলেন, এমন অনেক বিদআত আবিষ্কৃত হয়েছে, যা সালাফে সালেহীনগণ সমর্থন করেছেন। যেমন গ্রন্থাকারে কুরআন একত্রিত করণ, হাদীছ সঙ্কলন করণ ইত্যাদি।
উপরোক্ত যুক্তির উত্তর এই যে, শরীয়তের ভিতরে এ বিষয়গুলোর মূল ভিত্তি রয়েছে। এগুলো নতুন কোন বিষয় নয়। উমার (রাঃ) এর কথা, “এটি একটি উত্তম বিদআত”, এর দ্বারা তিনি বিদআতের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করেছেন। ইসলামের পরিভাষায় যাকে বিদআত বলা হয়, সে অর্থ গ্রহণ করেন নি। মৌলিকভাবে ইসলামী শরীয়তে যে বিষয়ের অস্তিত্ব রয়েছে, তাকে বিদআত বলা হয়নি। এমন বিষয়কে যদি বিদআত বলা হয়, তার অর্থ দাড়ায় জিনিষটি শাব্দিক অর্থে বিদআত, পারিভাষিক অর্থে বিদআত নয়। সুতরাং শরীয়তের পরিভাষায় এমন বিষয়কে বিদআত বলা হয়, যার পক্ষে কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অর্থাৎ দুনিয়ার ক্ষেত্রে যদি কেউ নতুন কোন কাজ করে যা রাসুল (সাঃ) এর যুগে ছিল না সেটি শাব্দিক অর্থে বিদআত হলেও শরিয়াতগত পরিভাষায় নয়। যেমন রাসুল (সাঃ) মোবাইল ব্যাবহার করেন নি, তাহলে কি মোবাইল ব্যাবহার করা বিদআত? রাসুল (সাঃ) উটে চড়েছেন, কিন্তু আমরা বাস, ট্রেন, বিমান ইত্যাদিতে চড়ি তাহলে কি এগুলোতে চড়া কি বিদআত? এগুলো বিদআত নয়। কেননা বিদআত হচ্ছে সেটাই যেটাকে দ্বীনের অংশ মনে করে করা হয় এবং নেকীর আশায় করা হয়। দুনিয়া এবং দ্বীন ভিন্ন জিনিষ। দুনিয়ার ক্ষেত্রে কেউ নতুন নতুন জিনিষ আবিষ্কার করলে বা ব্যাবহার করলে সেটা শাব্দিক অর্থে বিদআত হলেও শরিয়াতগত পরিভাষায় বিদআত নয়। কেননা রাসুল (সাঃ) বলেছেন- নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। (মুসলিমঃ ৭৬৮)
তাই মাইকে আযান দেয়া, ফেসবুক ব্যাবহার করা ইত্যাদি এগুলো বিদআত নয়। আর গ্রন্থাকারে কুরআন সংকলনের পক্ষে দলীল রয়েছে। রাসূল (সাঃ) কুরআনের আয়াতসমূহ লিখার আদেশ দিয়েছেন। তবে এই লিখাগুলো একস্থানে একত্রিত অবস্থায় ছিলনা। তা ছিল বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সাহাবাগণ তা এক গ্রন্থে একত্রিত করেছেন। যাতে কুরআনের যথাযথ হেফাযত করা সম্ভব হয়।
তারাবীর নামাযের ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, রাসূল (সাঃ) তাঁর সাহাবাদেরকে নিয়ে জামাতবদ্বভাবে কয়েকরাত পর্যন্ত তারাবীর নামায আদায় করেছেন। ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে পরবর্তীতে ছেড়ে দিয়েছেন। আর সাহাবাগণের প্রত্যেকেই রাসূল (সাঃ) এর জীবিতাবস্থায়ও মৃত্যুর পর একাকী এ নামায আদায় করেছেন। পরবর্তীতে উমার (রাঃ) সবাইকে এক ইমামের পিছনে একত্রিত করেছেন, যেমনিভাবে তাঁরা রাসূল (সাঃ) এর পিছনে তাঁর ইমামতিতে এ নামায আদায় করতেন। তাই ইহা বিদআত নয়।
হাদীছ লিখিতভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারেও দলীল রয়েছে। রাসূল (সাঃ) কতিপয় সাহাবীর জন্য তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাদীছ লিখে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণ দেয়ার পর আবু শাহ নামক জনৈক সাহাবী রাসূল (সাঃ) এর কাছে ভাষণটি লিখে দেয়ার আবেদন করলে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, اكتبوا لأبى شاه)) অর্থাৎ আবু শাহের জন্য আমার আজকের ভাষণটি লিখে দাও। তবে রাসূল (সাঃ)এর যুগে সুনির্দিষ্ট কারণে ব্যাপকভাবে হাদীছ লিখা নিষেধ ছিল। যাতে করে কুরআনের সাথে হাদীস মিশ্রিত না হয়ে যায়। পরবর্তীতে যখন রাসূল (সাঃ) ইন্তেকাল করলেন এবং কুরআনের সাথে হাদীছ মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূরিভুত হলো, তখন মুসলমানগণ হাদীস সংরক্ষণ করে রাখার জন্য তা লিখার কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। যারা এ মহান কাজে আঞ্জাম দিয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহ তায়া’লা উত্তম বিনিময় দান করুন। কারণ তারা আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাতকে বিলুপ্তির আশংকা থেকে হেফাজত করেছেন।
বিদআতের কু প্রভাবঃ
১) সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে- বিদআতি ব্যক্তির তওবা নসীব হয় না, কেননা সে তো এটা নেকি মনে করে করছে। চোরের মনে এক সময় অনুশোচনা আসে, মদখরের মনে এক সময় অনুশোচনা আসে কিন্তু বিদআতি ব্যক্তির মনে অনুশোচনা আসে না।
২) বিদ’আত ইসলামী লোকদের মাঝে দুশমনী, ঘৃণা, বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় এটিই আমার সোজা সরল পথ তোমরা তারই অনুসরণ কর, তোমরা বহু পথের অনুসরণ করো না, কারণ তা তোমাদেরকে তাঁর এক পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে” – সূরা আন’আম: ১৫৩
৩) বিদ’আত সহীহ সুন্নাহকে বিতাড়িত করে তার স্থলাভিষিক্ত হয়। বাস্তব নমুনায় এর বিরাট প্রমাণ রয়েছে। যেমন ফরজ সালাত শেষে কিছু সুন্নাতি যিকর, দুয়া রয়েছে। কিন্তু জামা’বদ্ধ হয়ে হাত তুলে দো’আ করলে, সালাতের পরে পঠিতব্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত দো’আ ও যিকিরগুলো পড়া হয় না । অতএব বিদআত করলে সহীহ সুন্নাহ বিতাড়িত হবেই।
My youtube channel
1.HR Harun Ahmed (এটা প্রতিবাদমূলক)
2.Funny Point 1M (এটা বিনোদনমূলক)
৪) যারা বিদআত করে তারা সর্বদা আল্লাহ্ থেকে গাফেল থাকে এবং জান্নাতের জন্য শর্টকাট খুঁজে। যেমন- যারা নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে না তারা জুম্মার দিনে মুনাজাত দ্বারা পার পেতে চায়। যারা সারা বছর ফরজ ইবাদাত করে না, তারা শব-ই-বরাতের মত বিদআত তৈরি করে শর্টকাটে জান্নাত পেতে চায়।
৫) সুন্নাতকে ঘৃণা করে বিদআত করলে ফিতনায় পরে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। মহান আল্লাহ্ বলেন, “যারা রাসুলের নির্দেশের বিরোধীতা করবে তারা যেন সতর্ক হয় তাদেরকে ফিতনা পেয়ে বসবে বা তাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তি দ্বারা গ্রাস করা হবে।” (সূরা আন-নূর: ৬৩)
৬) যারা সহিহ সুন্নাহর উপর আমল করে তাদেরকে বিদআতিরা গালি-গালাজ করে।
বিদআতের পরিনামঃ
উপরোক্ত আলচনায় এটা স্পষ্ট যে, বিদআত করা সম্পূর্ণ হারাম। বিদআতের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। বিদআত করলে ইবাদাত কবুল হয় না। বিদআতের শেষ পরিণাম জাহান্নাম। বিদআত করলে কিয়ামতের দিন যখন সূর্য মাথা অতি নিকটে থাকবে তখন সকলে তৃষ্ণায় পানি পান করতে চাইবে, আর তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার উম্মতকে হাউজে কাউসার থেকে পানি পান করাবেন। কিন্তু আফসোস বিদআতিরা সেই দিন পানি পান করতে পারবে না।
আবু হাসেম হতে বর্ণিত , তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে, আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন: তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো: দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা” (সহীহ মুসলিম-৪২৪৩)
এর চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে? বিদআতের কারনে জাহান্নাম অবধারিত- রাসূল (সাঃ) বলেছেন: ‘সব বিদ’আতই ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিনাম-ই হচ্ছে জাহান্নাম। (আবু দাউদ)
প্রশ্নঃ মহানবী (সাঃ) এর সময় গাড়ী বা মটর সাইকেল ছিলো না এগুলো কি বিদায়াত ।যদি বিদায়াত হয় তাহলে আমাদের ধনী ভাইয়েরা গাড়ী চড়ে এবং আমাদের অনেক ভাইয়েরা মটর সাইকেল চালায় তারা কি ভুল করছে? নতুন সব সংযজনি কি বিদায়াত?
উত্তরঃ এগুলো বিদায়াত না ,বিদায়াত হলো দ্বীনে নতুন কিছু সংযোগ করা,কিন্তু গাড়ী বা মটর সাইকেল চালানোর সময় মনে অহংকার করা উচিৎ না কারন অহংকার হারাম । সহী বুখারী -৯ম খন্ড -ইসলামিক ফাউন্ডেশন -৫৬৩৯ নং হাদীস -আনাস ইবন রাঃ থেকে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেছেন তোমরা একে অন্যর প্রতি বিদ্বেষভাব পোষন করো না,পরস্পর হিংসা করো না,তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই থেকো।
মুসলিম সমাজের কমন শিরক ও বিদাআতঃ
আমাদের সমাজে এই শিরক ও বিদাআত গুলো বিরাজমান , এ গুলো থেকে তওবা না করে মরলে বড়ই বিপদে পরতে হবে মৃত্যুর পরে , শয়তান চায় আল্লাহর বান্দা তওবা না করে মারা যাক>>আপনি কি চান না আপনার ভাই বোনেরা তওবা করুক , যদি চান তাহলে তাদের কে আজই জানিয়েই দিন। শিরক ও বিদাআত আল্লাহ কখনই মাফ করবে না।
বিদাত থেকে বাঁচতে হলে যা জানা আবশ্যকঃ
বিদ‘আত কাকে বলে এ বিষয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। অনেকের ধারণা যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ছিলনা তা-ই বিদ‘আত। আবার অনেকে মনে করেন বর্তমান নিয়মতান্ত্রিক মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতি একটি বিদ‘আত, মসজিদে কাতার করে নামায পড়া বিদাত, বিমানে হজ্জে যাওয়া বিদ‘আত, মাইকে আজান দেয়া বিদ‘আত ইত্যাদি। এ সকল দিক বিবেচনা করে তারা বিদ‘আতকে নিজেদের খেয়াল খুশি মত দুই ভাগ করে কোনটাকে হাসানাহ (ভাল বিদ‘আত) আবার কোনটাকে সাইয়্যেআহ (মন্দ বিদ‘আত) বলে চালিয়ে দেন। আসলে বিদ‘আত সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে এ বিভ্রান্তি।
বিদ‘আতের আভিধানিক অর্থ হলঃ
الشيء المخترع على غير مثال سابق ومنه قوله تعالى (قل ما كنت بدعا من الرسل) وجاء على هذا المعنى قول عمر رضيالله عنه (نعمت البدعة )
অর্থ: পূর্বের দৃষ্টান্ত ব্যতীত নতুন সৃষ্ট কোন বিষয় বা বস্তু। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “বলুন,আমি তো কোন নতুন রাসূল নই”। আসলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাসূল হিসাবে নতুনই। কিন্তু এ আয়াতে বিদ‘আত শব্দের অর্থ হল এমন নতুন যার দৃষ্টান্ত ইতোপূর্বে গত হয়নি। আর উমার (রাঃ) তারাবীহর জামাত কায়েম করে বলেছিলেন “এটা উত্তম বিদ‘আত।” এখানেও বিদ‘আতের আভিধানিক অর্থ প্রযোজ্য।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় বিদ‘আতের সংজ্ঞাঃ
ما أحدث في دين الله وليس له أصل عام ولا خاص يدل عليه.
‘যা কিছু আল্লাহর দ্বীনে নতুন সৃষ্টি করা হয় অথচ এর সমর্থনে কোন ব্যাপক বা বিশেষ দলীল প্রমাণ নেই।’ অর্থাৎ নব সৃষ্ট বিষয়টি অবশ্যই ধর্মীয় ব্যাপারে হতে হবে। যদি ধর্মীয় ব্যাপার ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে নব-আবিস্কৃত কিছু দেখা যায় তা শরীয়তের পরিভাষায় বিদ‘আত বলে গণ্য হবে না, যদিও শাব্দিক অর্থে তা বিদ‘আত।
এ প্রসঙ্গে আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) তার ‘র্শিক ও বিদ‘আত’ কিতাবে বিদ‘আতের পরিচ্ছন্ন সংজ্ঞা উল্লেখ করেছেন। তা হল: যে বিশ্বাস বা কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করেননি কিংবা পালন করার নির্দেশ দেননি সেই ধরনের বিশ্বাস বা কাজকে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করা,এর অঙ্গ বলে সাব্যস্ত করা, সওয়াব বা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় মনে করে এই ধরনের কাজ করার নাম বিদ‘আত।
যে সকল বিশ্বাস ও কাজকে দ্বীনের অংশ মনে করে অথবা সওয়াব হবে ধারণা করে ‘আমল করা হয় তা বিদ‘আত। কারণ হাদীসে এসেছে- আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে আমাদের এ ধর্মে এমন কোন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে যা ধর্মে অন্তর্ভুক্ত ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত হবে”। (বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হল যে, নতুন আবিস্কৃত বিষয়টি যদি ধর্মের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরে নেয়া হয় তাহলে তা বিদ‘আত ও প্রত্যাখ্যাত।
হাদীসে আরো এসেছে- “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যার প্রতি আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত”। (মুসলিম)
এ হাদীসে “যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই” বাক্যটি দ্বারা এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, বিষয়টি ধর্মীয় হতে হবে। ধর্মীয় বিষয় হিসাবে কোন নতুন ‘আমল করলেই বিদ‘আত হবে।
যারা মাইকে আজান দেন তারা জানেন যে, মাইকে আজান দেয়ার আলাদা কোন মর্যাদা নেই বা আজানে মাইক ব্যবহার করা সওয়াবের কাজ বলে তারা মনে করেন না। এমনিভাবে বিমানে হজ্জে যাওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক মাদ্রাসার প্রচলন, নাহু সরফের শিক্ষা গ্রহণ প্রভৃতি বিষয় ধর্মীয় বিষয় বলে মনে করা হয় না, তাই তা বিদ‘আত হওয়ার প্রশ্ন আসে না। এ ধরনের বিষয়গুলি বিদ‘আত নয় বরং সুন্নাতে হাসানাহ বলা যেতে পারে।
অনেকে এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিদ‘আতকে দু’ভাগে ভাগ করার চেষ্টা করেনঃ
বিদ‘আতে হাসানাহ ও বিদ‘আতে সাইয়্যেআহ। সত্যি কথা হল বিদ‘আতকে এভাবে ভাগ করাটা হল আরেকটি বিদ‘আত এবং তা হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিপন্থী। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “সকল নব-আবিস্কৃত (দীনের মধ্যে) বিষয় হতে সাবধান! কেননা প্রত্যেকটি নব-আবিস্কৃত বিষয় বিদ‘আত,আর প্রত্যেকটি বিদ‘আত হল পথভ্রষ্টতা”। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও বাইহাকী)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সকল প্রকার বিদ‘আত ভ্রষ্টতা। এখন যদি বলা হয় কোন কোন বিদ‘আত আছে যা হাসানাহ বা উত্তম, তাহলে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ হাদীসবিরোধী হয়ে যায়। তাই তো ইমাম মালিক (রঃ) বলেছেন: ''যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন বিদ‘আতের প্রচলন করে আর ইহাকে হাসানাহ বা ভাল বলে মনে করে, সে যেন প্রকারান্তরে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পয়গাম পৌছাতে খিয়ানাত করেছেন। কারণ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলেন: ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করে দিলাম।’ সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে যা ধর্ম রূপে গণ্য ছিল না আজও তা ধর্ম বলে গণ্য হতে পারে না। তাই বিদ‘আতে হাসানাহ বলে কোন কিছু নেই।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন আমরা তাই বলব; সকল প্রকার বিদ‘আত গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা। বিদ‘আতে হাসানায় বিশ্বাসীরা যা কিছু বিদ‘আতে হাসানাহ হিসাবে দেখাতে চান সেগুলো হয়ত শাব্দিক অর্থে বিদ‘আত, শরয়ী অর্থে নয় অথবা সেগুলো সুন্নাতে হাসানাহ। যে সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
من سن فى الإسلام سنة حسنة فله أجرها وأجر من عمل بها بعده من غير أن ينقص من أجورهم شيء، ومن سن في الإسلامسنة سيئة فله وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير أن ينقص من أوزارهم شيء. (رواه مسلم عن جرير بن عبد اللهرضي الله عنهما)
অর্থ: “যে ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতি প্রচলন করল সে উহার সওয়াব পাবে এবং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে উহার পাপ বহন করবে, এবং যারা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে, তাতে তাদের পাপের কোন কমতি হবে না”। (মুসলিম)
এখানে একটা প্রশ্ন হতে পারে যে, শবে বরাত উদযাপন, মীলাদ মাহফিল, মীলাদুন্নবী প্রভৃতি আচার-অনুষ্ঠানকে কি সুন্নাতে হাসানাহ হিসাবে গণ্য করা যায় না? মাইকে আজান দেয়া, মাদ্রাসার পদ্ধতি প্রচলন, আরবী ব্যাকরণ শিক্ষা ইত্যাদি কাজগুলো যদি সুন্নাতে হাসানাহ হিসাবে ধরা হয় তাহলে শবে বরাত, মীলাদ ইত্যাদিকে কেন সুন্নতে হাসানাহ হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না?
পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, বিদ‘আত হবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে। যদি নতুন কাজটি ধর্মের অংশ মনে করে অথবা সওয়াব লাভের আশায় করা হয়, তাহলে তা বিদ‘আত হওয়ার প্রশ্ন আসে। আর যদি কাজটি ধর্মীয় হিসাবে নয় বরং একটা পদ্ধতি হিসাবে করা হয় তাহলে তা বিদ‘আত হওয়ার প্রশ্ন আসে না। যেমন ধরুন মাইকে আজান দেয়া। কেহ মনে করেনা যে, মাইকে আজান দিলে সওয়াব বেশী হয় অথবা মাইক ছাড়া আজান দিলে সওয়াব হবে না। তাই সালাত ও আজানের ক্ষেত্রে মাইক ব্যবহারকে বিদ‘আত বলা যায় না।
তাই বলতে হয় বিদ‘আত ও সুন্নাতে হাসানার মধ্যে পার্থক্য এখানেই যে, কোন কোন নতুন কাজ ধর্মীয় ও সওয়াব লাভের নিয়াত হিসাবে করা হয় আবার কোন কোন নতুন কাজ দ্বীনি কাজ ও সওয়াবের নিয়াতে করা হয় না বরং সংশ্লিষ্ট কাজটি সহজে সম্পাদন করার জন্য একটা নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।
যেমন আমরা যদি ইতিপূর্বে উল্লিখিত হাদীসটির প্রেক্ষাপটের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে, একবার মুদার গোত্রের কতিপয় অনাহারী ও অভাবগ্রস্থ লোক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলো। তিনি সালাত আদায়ের পর তাদের জন্য উপস্থিত লোকজনের কাছে সাহায্য চাইলেন। সকলে এতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের আগ্রহ ও খাদ্য সামগ্রী দান করার পদ্ধতি দেখে উল্লিখিত কথাগুলি বললেন। অর্থাৎ, “যে ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতি প্রচলন করল সে উহার সওয়াব পাবে এবং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে উহার পাপ বহন করবে, এবং যারা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে, তাতে তাদের পাপের কোন কমতি হবে না”। (মুসলিম)
অভাবগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য যে পদ্ধতি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ওটাকে সুন্নাতে হাসানাহ বলা হয়েছে। বলা যেতে পারে, সকল পদ্ধতি যদি হাসানাহ হয় তাহলে সুন্নাতে সাইয়্যেআহ বলতে কি বুঝাবে? উত্তরে বলব, মনে করুন কোন দেশের শাসক বা জনগণ প্রচলন করে দিল যে এখন থেকে স্থানীয় ভাষায় আজান দেয়া হবে, আরবী ভাষায় দেয়া চলবে না। এ অনুযায়ী ‘আমল করা শুরু হল। এটাকে আপনি কি বলবেন? বিদ‘আত বলতে পারবেন না, কারণ যারা এ কাজটা করল তারা সকলে জানে অনারবী ভাষায় আজান দেয়া ধর্মের নির্দেশ নয় এবং এতে সওয়াবও নেই। তাই আপনি এ কাজটাকে সুন্নাতে সাইয়্যেআহ হিসাবে অভিহিত করবেন। এর প্রচলনকারী পাপের শাস্তি প্রাপ্ত হবে, আর যারা ‘আমল করবে তারাও। আবার অনেক উলামায়ে কিরাম বিদ‘আতকে অন্যভাবে দু ভাগে ভাগ করে থাকেন। তারা বলেন বিদ‘আত দু প্রকার।
একটা হল বিদ‘আত ফিদ্দীন (البدعةفيالدين) বা ধর্মের ভিতর বিদ‘আত।
অন্যটা হল বিদ‘আত লিদ্দীন (البدعةللدين) অর্থাৎ ধর্মের জন্য বিদ‘আত।
প্রথমটি প্রত্যাখ্যাত আর অন্যটি গ্রহণযোগ্য।
আমার মতে এ ধরণের ভাগ নিষ্প্রয়োজন, বরং বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে সহায়ক। কারণ প্রথমতঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সকল বিদ‘আত পথভ্রষ্টতা বা গোমরাহী। এতে উভয় প্রকার বিদ‘আত শামিল।
দ্বিতীয়তঃ অনেকে বিদ‘আত ফিদ্দীন করে বলবেন, আমি যা করেছি তা হল বিদ‘আত লিদ্দীন। যেমন কেহ মীলাদ পড়লেন। অতঃপর যারা এর প্রতিবাদ করলেন তাদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়ে অনেক দূর যেয়ে বললেন, মীলাদ পড়া হল বিদ‘আত লিদ্দীন– এর দ্বারা মানুষকে ইসলামের পথে ডাকা যায়। অথচ তা ছিল বিদ’আতে ফিদ্দীন (যা প্রত্যাখ্যাত)!
আসলে যা বিদ‘আত লিদ্দীন বা দ্বীনের স্বার্থে বিদ‘আত তা শরীয়তের পরিভাষায় বিদ‘আতের মধ্যে গণ্য করা যায় না। সেগুলোকে সুন্নাতে হাসানাহ হিসাবে গণ্য করাটাই হাদীসে রাসূল দ্বারা সমর্থিত।
বিদআত সম্পর্কে ভাল একটি বই বিদাত পরিচিতির মুলনীতি-ড: মনজুরে ইলাহী বিদআত এর কোন ভাল-মন্দ নেই বিদআত হলো বিদআতই বুখারী শরীফ -ইসলামিক ফাউন্ডেশন – ১০ম খন্ড – ৬৮০৮ নং হাদিস -আসিম রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বললেন নবী সাঃ মদীনাকে সংরক্ষিত এলাকা বলেছিলেন ।এই এলাকার কোন গাছ কাটা যাবে না এবং যে বিদআত সৃস্টি করবে তার উপর আল্লাহর ও সকল মানুষের লানত।সামান্য গাছ কাটা যদি ঐ এলাকায় বিদআত হয় আসুন দেখা যাক আমরা কি কি বিদআত করে থাকি-
১) বৌ ভাত, গায়ে হুলুদ, জন্মদিন, নববর্ষ অনুষ্ঠান বিদআত।
এগুলো টাকার অপচয়, আল্লাহ আমাদের খুশির ও আনন্দের জন্য ২টি ঈদ দিয়েছেন আর আমরা চিন্তা করি কি করে আরো খুশির ও আনন্দের দিন আমাদের মাঝে আনা যায় – নবী সাঃ যে গুলো আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন তারমধ্যে নুতন কিছু বা অনুষ্ঠান যুক্ত করা বিদআত। আমরা যদি ৯৫% ইসলাম মেনে চলি আর ১% থেকে ৫% অন্য কোন ধর্ম থেকে নিয়ে মেনে চলি তাহলে এইটা আর ইসলাম থাকে?
সুরা আল ইমরান (৩) ১৪৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন – হে মানুষ, তোমরা যারা (আল্লাহর উপর)ইমান এনেছো, তোমরা যদি NON Muslim দের অনুসরন করতে শুরু করো তাহলে এরা তোমাদের পূর্ববর্তি (জাহেলিয়াতের) অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা নিদারুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরবে।
সুরা বাকারা (২) ২৭০ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন – তোমরা যা কিছু খরচ করো আর যা কিছু মানত করো আল্লাহ তা নিশ্চই জানে, যালেমদের কোন সাহায্যকারি নাই।
তিরমিযী শরীফ -মিনা বুক হাউস-কিয়ামত অধ্যায় -২৩৫৮ নং হাদিস -মাসুউদ রা থেকে বর্ণিত নবী সাঃ বলেন রোজ কিয়ামতে পাচটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে তার একটি হল তুমি তোমার ধন সম্পদ কোথা থেকে আয় করেছো এবং কোন খাতে ব্যবহার করেছো?
মেশকাত শরীফ -সালাউদ্দিন বইঘর -৬ষ্ট খন্ড -৩০৭৩ নং হাদিস -আনাস (রাঃ) বলেন নবী (সাঃ )যয়নবের বিয়েতে যত বড় বিবাহ ভোজ করেছেন তা অন্য কোন বিবির জন্য করেনি,তাতে তিনি একটা ভেড়া দিয়ে বিবাহ ভোজ করিয়েছেন।
অতএব বিবাহের সময় অনুষ্ঠান বা বিবাহ ভোজ একটা (যে পক্ষই অনুষ্ঠান করুক বা উভই পক্ষ একএে অনুষ্ঠান করুক এগুলো বিদআত কেন – নবী সাঃ এর সময় লোকজন বিয়ে করেছে ও নবী সাঃ অনেকের বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু নবী সাঃ বৌ ভাত, গায়ে হুলুদ অনুস্ঠান করেনি এজন্য এগুলো বিদআত নবী (সাঃ) মাগরিবের নামায পড়েছেন ৩ রাকাত এখন আপনি কি ৪ রাকাত নামায পড়বেন মাগরিবে? তিনি বিয়ের নিয়ম আমাদের বলে দিয়ে গেছেন?
মেশকাত শরীফ -সালাউদ্দিন বইঘর -৬ষ্ট খন্ড -৩০৮০ নং হাদিস আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত -নবী সাঃ বলেছেন সর্বাপেক্ষা মন্দ সে অলীমার ভোজ (বিবাহ ভোজ)যাতে ধনীদের দাওয়াত করা হয় আর গরীবদের বাদ দেওয়া হয়।
আমাদের উচিৎ যাদের বিবাহ ভোজে যাচ্ছি তাদের জন্য দোয়া করা।সেইটা অধিকাংশ লোকই আমরা করি না। গিফট না নিয়ে গেলে মান সম্মান থাকবে না অথচ গিফট বিবাহ ভোজের অংশ না ,দোয়া বিবাহ ভোজের অংশ। (গিফট দেওয়া যাবে না তা না, কিন্তু আমাদের দোয়া করা উচিৎ।
২) মিলাদ ও মৃত্যুর পর ৪০ শে পালন বিদআত
নবী (সাঃ) এর সময় লোকজন মারা গেছে কিন্তু তিনি কখনও কারও জন্য মিলাদ বা ৪০ দিন পরে কোন অনুস্ঠান করেনি ।মৃত ব্যাক্তিদের জন্য দোয়া করেন,যা করলে আপনার পিতা মাতার ভাল হবে এটাই আমরা করি না।
৩) ঈদে মিলাদুন্নবী বিদআত। (মিলাদ-জন্ম)
জন্মঅস্টমী (হিন্দু), বড়দিন (খ্রিস্টান), মিলাদুন্নবী একই কথা একই কাজ
সুরা আল ইমরান (৩) ১৪৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন – হে মানুষ, তোমরা যারা (আল্লাহর উপর)ইমান এনেছো,তোমরা যদি NON Muslim দের অনুসরন করতে শুরু করো তাহলে এরা তোমাদের পূর্ববর্তি (জাহেলিয়াতের) অবস্হা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।ফলে তোমরা নিদারুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরবে।
নবী (সাঃ) এর (মৃত্যু) ইন্তেকালের পর কোন সাহাবী (রাঃ) নবী (সাঃ) এর মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান করেনি। তাহলে আমরা করছি কেন? তাহলে সাহাবীরা কি ভুল করে গেছে? এ থেকে মানুষ শিখেছে নিজের,ছেলে মেয়ের জন্মদিন পালন। আরো লোক আছে তাদের জন্মদিন কেন পালন করছেন না?
(সাহাবীরা, বাকি নবী-রাসুলরা কি দোষ করেছেন তাদের নাম তো আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন। নবী (সাঃ) ইদে মিলাদুন্নবীর দিন কয় রাকাত নামায পরেছেন? ইদের দিনতো মানুষ ২ রাকাত নামায পড়ে নাকি?
টাকার অপচয়। কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় ভাই আপনি কেন মিলাদুন্নবী পালন করেন? উত্তরে সে বলে আমরা মিলাদুন্নবী করি কারন আমরা নবী (সাঃ) কে ভালবাসি। আপনি যে টাকা মিলাদুন্নবীর দিন খরচ করছেন এইটা কি ঠিক? আল্লাহ বলেছেন আল্লাহর পথে খরচ করতে (দান করেন?) থেকে। যারা মিলাদুন্নবী করে তাদের চিন্তা দ্বীন পুর্নাঙ্গ না তারা দ্বীন কে পুর্নাঙ্গ করার অযথা চেস্টা করছে। কিন্তু আল্লাহ বলছেন REF আমি তোমাদের জন্য দ্বীন কে পুর্নাঙ্গ করে দিলাম। যেইটা করা উচিৎ সেইটাই আমরা করি না।নবী (সাঃ) প্রতি অতিরিক্ত সলাত (দুরুদ) পাঠ করেন প্রতিদিন।যা তিনি আদেশ করে গেছেন।
৪) বিবাহ বার্ষিকী পালন করা বিদআত
নবী (সাঃ) বিবাহ করেছেন কিন্তু কখন ও বিবাহ বার্ষিকী পালন করেনি এবং সাহাবীরাও করেনি।
৫) মোবাইল, কম্পিউটার, ফ্যান, মাইক, ইটের বাড়ী, প্লেন, নেট, টিভি, ডিস
এ গুলো বিদআত না কেন। এগুলো তো নবী সাঃ এর সময় ছিলো না কিন্তু আমরা এ গুলো ব্যবহার করি? আল্লাহর নিয়ামত গুলোকে আমরা ভাল কাজে ব্যবহার করি।
সহী মুসলিম -ইসলামিক ফাউন্ডেশন - ৭ম খন্ড - ৫৬৯৮ নং হাদিস -আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত, নবী সাঃ বলেছেন -আল্লাহ বলেন আদম সন্তান যুগ ও সময় কে গালি দেয়, অথচ এ গুলো আমিই নিয়ন্ত্রন করি এবং পরিবর্তন করি।
সুরা আস ছাফফাত (৩৭) ৯৬ নং আয়াত -আল্লাহ বলছেন – আল্লাহ তোমাদের সৃস্টি করেছেন এবং (সৃস্টি করেছেন) তোমরা যা কিছু বানাও তাও।
তিরমিযী শরীফ – মীনা বুক হাউস – হাদীস নং ১৯৮৮ – ইবনে সারিফ রাঃ থেকে বর্ণিত কিছু সাহাবী বললেন আমরা কি রোগীর চিকিৎসা করব না? আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেছেন অবশ্যই চিকিৎসা করবে। পূর্বে মানুষরা রোগ নিরাময়ের জন্য ডাক্তারের কাছে যেত এখনও মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য ডাক্তারের কাছে যায় কিন্তু এখন চিকিৎসা অনেক উন্নত এবং রোগও বেশী।রোগ বেশী বলেই ঔষধ ও যন্ত্রাংশ বেশী। নবী (সাঃ) সময় এ মানুষেরা এক স্থান থেকে অন্য স্হানে গিয়েছে উটে বা পায়ে হেটে আর এখন আমরা যাচ্ছি বাসে, প্লেনে,গাড়িতে স্বল্প সময়ে।
নবী (সাঃ) সময় মানুষেরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে খবর পাঠিয়েছে লোকদের মাধ্যমে আর আমরা এখন খবর পাঠাচ্ছি মোবাইল বা মেইল এর মাধ্যমে অল্প সময়ে। নবী (সাঃ) এর সময় টিভি, ডিশ, ইন্টারনেট ছিল না। টিভি, ডিশ, ইন্টারনেট এগুলো সংবাদ পাঠানোর একটি মাধ্যম। এগুলোর আবিস্কার হয়েছে দুনিয়ার যে কোন প্রান্তের খবর অল্প সময়ে আপনার কাছে পাঠানোর জন্য। কিন্তু আমরা কি করছি? আমরা আমদের নবী (সাঃ) এর খবর মানুষের কাছে না পৌছে NON Muslim দের খবরটা নিচ্ছি এবং রীতিমত তাদেরটা ভাল মনে করে সেগুলো করছি। একই কাজ আমরা করছি স্বল্প সময়ের মধ্য, এজন্য এগুলো বিদআত না। কিন্তু বউ ভাত, গায়ে হলু্দ, মিলাদ, জন্মদিন, নববর্ষ আগে কখনও নবী (সাঃ) সাহাবীরা পালন করেনি। তাহলে কি তারা ভুল করেছে? আসলে আমরা কি চাচ্ছি? ১২মাসে ১৩টা অনুষ্ঠান?
মাদ্রাসা – যে স্থানে মানুষদের কোরআন ও হাদিস শিক্ষা দেওয়া হয়। নবী সাঃ বলেছেন তোমরা এতিমদের দেখ এজন্য এইটা বিদআত না। তাবলীগ করা বিদআত না কারন নবী সাঃ এর সময় দূর দুরান্তের থেকে মানুষরা নবী সাঃ বা সাহাবীদের কাছে এসেছে ইসলাম জানার জন্য। আপনিও তো একই কাজ করছেন আপনার সামর্থের মধ্য তাবলীগ করতে, ইসলাম কে জানতে।
সুরা মায়েদা (৫) ৬৭ নং আয়াত আল্লাহ বলেছেন – হে রাসুল – যা কিছু তোমার উপর নাযিল করা হইয়েছে তা তুমি অন্যর কাছে পোঁছে দেও, যদি তুমি তা না করো তাহলে তুমি তো মানুষদের তার (আল্লাহর) বার্তা পৌছে দিলে না।আল্লাহ তোমাকে মানুষের (অনিষ্ট) থেকে বাচিয়ে রাখবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কখনও কোনো অবাধ্য জাতিকে পথ প্রদর্শন করেন না। শিরক যা আমরা প্রায় করে থাকি কিন্তু জানি না এইগুলো শিরক!
শিরক ২ প্রকার আকবর শিরক (বড়), আসগর শিরক (ছোট)
ক) আকবর (বড়) শিরিকঃ
বাচ্চাদের কপালে কাজলের কালো ফোঁটা দেওয়া হয়, যাতে বদ নজর যেন না লাগে এইটা শিরক। কে রক্ষা করবে বদ নজর থেকে কাজলের কালো ফোঁটা? (সুরা নাস, ফালাক)
খ) আসগর (ছোট) শিরকঃ
হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত নবী সাঃ বলেছেন তোমরা ধংসাত্নক কাজ থেকে বেচে থাক তা হলো আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা ও যাদু করা।
মেশকাত শরীফ -সালাউদ্দিন বইঘর -১০ম খন্ড -৪৩৫৭ নং হাদিস -ঈসা বিন হামযা রা বলেন -একদা আমি উকাইমের নিকট গেলাম, তার শরীরে লাল ফোসকা পড়েছে আমি বললাম আপনি তাবিজ ব্যবহার করবেন না? তিনি বললেন, তা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। কেননা নবী সাঃ বলেছেন যে এই গুলো ব্যবহার করে তাকে তার প্রতি সর্পদ করে দেওয়া হয়।
আর যারা বলেন – আমার তাবিজে তো আল্লাহর কালাম লেখা অথচ তা নিয়ে আপনি বাথরুমে যাচ্ছেন, যদি আপনাকে বলি আপনি কোরআন নিয়ে বাথরুমে যানতো, তা কি আপনি পারবেন?অথচ আপনি আল্লাহর কালাম কে অ-সন্মান করছেন ।আর তাবিজ যারা ব্যবহার করে তারা শিরকে লিপ্ত হয় এক না এক সময় তাবিজের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।
৯) জ্ঞানগত শিরকঃ
ক) রাসুল সাঃ গায়েব সম্পর্কে জানতেন বলে বিশ্বাস করা।
খ) ভাগ্য সম্পর্কে জানার জন্য ফকির বা জ্যোতির্বিদদের নিকট গমন করা এবং তাদের কথা বিশ্বাস করা।
গ) জিন বা জিন সাধক রা গায়েব সম্পর্কে জানতে পারে বলে বিশ্বাস করা। পাখি, বানর ইত্যাদির মাধ্যমে ভাগ্য জানার চেষ্ঠা করা।
ঘ) আল্লাহর ওলি-আওলিয়া ও পীর সাহেব গায়েব জানেন বলে বিশ্বাস করা।
১০) পরিচালনা গত শিরিকঃ
ক) বিপদ মুক্তির জন্য দুরুদ বা খতমে নবী পাঠ করা।
খ) রাসুল সাঃ এর প্রশংসা বর্ণনা করে তাকে আল্লাহর অবতারে পরিনত করা।
গ) ওলি-আওলিয়ারা পৃথিবী পরিচালনা করেন বলে বিশ্বাস করা।
ঘ) কবরে পীররা হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে বিশ্বাস করা।
ঙ) কোন পীর কে দস্তগীর (আল্লাহর হাত পাকরাওকারী) নামে অভিহত করা।
চ) রাষ্টীয় ক্ষমতা প্রাপ্তির ক্ষেএে দেশের জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস মনে করা।
ছ) আওলিয়াদের কবরের মাটি, আশেপাশের গাছ বা পানি বা জীব জন্তুর দ্বারা উপকার সাধিত হয় বলে বিশ্বাস করা।
জ) মানব রচিত বিধান ও আইন দ্বারা দেশ শাসন ও বিচার কার্য পরিচালনা করা।
ঝ) জিনের অনিষ্ট থেকে বাচার জন্য জিনকে শিরনী দান করা।
ঞ) ভাগ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পাথরের প্রভাবকে বিশ্বাস করা। তারকারাজির ও গ্রহের প্রভাবকে বিশ্বাস করা।
১১। উপসনাগত শিরিকঃ
ক) আল্লাহর নামের সাথে যিকিরের সাথে রাসুল সাঃ এর নামের যিকির করা। যেমন – ইয়া রাসুল্লাহ, ইয়া রাহামুতল্লিল আলামিন, ইয়া নবী, নুরে রাসুল, নুরে খোদা ইত্যাদি।
খ) কবর মুখী হয়ে বা কবরের পাশে সালাত আদায় করা।
গ) দ্রুত দোয়া কবুল হবার আশায় মুরশিদ বা পীর এর বৈঠকখানার দিকে মুখ করে দুয়া করা।
ঘ) ওলি-আওলিয়াদের নিকট কিছু কামনা করা।
ঙ) আওলিয়াদেরকে সাহায্য এর জন্য আহবান করা।
চ) আওলিয়াদের কবরের পাশে দাড়িয়ে বিনয় প্রকাশ করা।
ছ) কবর, মাজার, দরবার, মুকামে মানত করা।
জ) কবরের চারপাশে প্রদক্ষিন করা।
ঝ) কবরকে সামনে রেখে রুকু বা সিজদা করা।
ঙ) গাইরুল্লাহর নামে কবর, মাজার বা অন্য কোথাও পশু জবাই দেওয়া।
ট) আল্লাহর ন্যায় পীর কে ভালবাসা।
ঠ) অন্তরে ওলি-আওলিয়া বা পীরদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের গোপন ভয় করা।
ড) আল্লাহ ব্যতীত অন্যর উপর ভরশা করা।
ঢ) আল্লাহ বা রাসুল ব্যতীত অন্য কোন মত বা পথের অন্ধ আনুগত্য বা অনুকরন বা অনুসরন করা।
প) পীরের নিকট রহমত ও করুনা কামনা করা।
১২ । অভ্যাসগত শিরিকঃ
ক) রোগ নিরাময়ের জন্য ধাতব দ্রব্য দ্বারা তৈরী আংটি বা বালা পরিধান করা।
খ) সর্ব অবস্থায় তাবিজ শিরিক।
গ) আগুন, রক্ত, সন্তান, মাটি ইত্যাদির নামে বা তাতে হাত রেখে শপথ গ্রহন করা বা কসম করা।
ঘ) কপালে টাকা স্পর্শ করে তা সম্মান করা।
[বিঃদ্রঃ সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বিদ‘আত সম্পর্কে এ কথাগুলো এখানে এ জন্য আলোচনা করলাম যাতে আলোচ্য বিষয়ের উপর কোন প্রশ্ন বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলে তার সমাধান যেন পাঠকবৃন্দ সহজে অনুধাবন করতে পারেন]
আর একটি কথা,,
মানুষ মাত্রই ভুল, উপরে উল্লেখিত বিষয়ে কোনো ভুল হলে ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । আর আমাকে সেটা সংশোধন করিয়ে দিলে খুশি হব ।
আসসালামুআলাইকুম,,,,
HR Harun Ahmed