বিড়ালের মতো 500 বছর না বেচে সিংহের মতো 5 ঘন্টা বাচুন।।।।।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষের জীবনধারা অনেক পাল্টিয়েছে। জীবনের সফলতা ও সার্থকতার ওপর যেসব নতুন মতবাদ জনপ্রিয় হয়েছে তা পুরোনো অনেক ধ্যান ধারণার পরিপন্থী। পশ্চিমা বিশ্বে এখন জীবনে সাফল্যের জন্য নিজেকে চেনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
আমরা যেমন আমাদের অভিভাবকের ও সমাজের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনের লক্ষ্য ও পেশা ঠিক করেছিলাম, এখন তেমন হয় না। আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে শেখানো হয়, তুমি নিজেকে চেনো, তুমি কী করতে চাও, কী অর্জন করতে চাও, তা ঠিক করো। তুমি কী পার তার ওপর লোকে তোমাকে দিয়ে কী করতে চায় তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আমার ছেলেমেয়েরা স্কুলে যা শিখে আসে, তা আমি নিজেও গভীরভাবে ভেবে দেখেছি। প্রকৃতপক্ষেই আমাদের ব্যক্তিত্ব ও জীবনধারা বিভাজিত। আমরা দ্বৈত জীবনযাপন করি। একটি হলো যেটি নিজে যাপন করতে চাই আর আরেকটি যা বাস্তবে যাপন করি।
আমি নিজেও জীবনের বেশির ভাগ সময় নিজের মতো করে যাপন করিনি। অনেকের মতো আমার ভুল ধারণা ছিল, আমি যেভাবে চাই, তেমনভাবে হয়তো চলা যায় না, অন্যদের মানিয়ে নিয়েই চলতে হয়, এটাই সমাজের নিয়ম।
দেরিতে হলেও আমার উপলব্ধি হয়েছে, আমার জীবনের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব আমাকেই নিতে হবে। আমাকে আমার অনুভব ও অনুভূতিগুলো আমার মতো করেই লালন করতে হবে। আমি আমার মতো, অন্যেরা অন্যদের মতো। আমি কীভাবে আমার আমিকে লালন করব, তা হবে সম্পূর্ণ আমার সিদ্ধান্ত।
আমি চিরদিন আমার আমিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে ভয় পেতাম। ভাবতাম আমাকে অন্যদের খুশি করে সামাজিক জীব হিসেবে বাঁচতে হবে। সব সময় সমাজের রীতিনীতি মেনে চলতে হবে। আমার মনে হতো আমি আমার মতো থাকলে আমাকে কেউ চাইবে না। গ্রহণযোগ্যতার জন্য আমাকে অন্যদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
শুধু আমার একার নয়, অনেকেই যেভাবে বাঁচেন, সেভাবে বাঁচতে চান না। এই অনিচ্ছাকৃত বাঁচার প্রচেষ্টায় মানুষ পাওয়ার চেয়ে হারায় বেশি।
আপনাকে নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন করতে হবে—আপনি কী চান? কীভাবে বাঁচতে চান? কীভাবে সুখী হন? আপনি কোথায় যেতে চান? কীভাবে যেতে চান?
অন্যেরা কীভাবে কী করতে চায়, তা আপনার বিবেচ্য বিষয় নয়। আপনি অনন্য। আপনি শুধু আপনার মতো, সে শুধু তার মতো, আমি আমার মতো। আপনি যেমন সেভাবে আপনি গর্বিত হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। আমি নিজেও আমার আমিত্ব নিয়ে গর্বিত। আমি আমার মতো থাকব, আপনি আপনার মতো। কেউ কারও সঙ্গে মানিয়ে নেবে না, মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
পৃথিবীতে অনেক পেশা, অনেক ব্যক্তিত্ব ও অনেক চরিত্রের মানুষ রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা বৈচিত্র্যপূর্ণ। লাল-বেগুনির মতো নয়, নীল-হলুদের মতো নয়, সব সব রং মিলেই রংধনু হয়।
নিজের জীবন নিজের নকশায় সাজাতে হয়। জীবনটা নিজের ঘরের মতো, তাতে নিজের পছন্দের জিনিসগুলো জায়গা পায়। যে ফুল পছন্দের সেই ফুল ফুলদানিতে থাকবে। যে পোশাক পছন্দ সেগুলো আলনায় থাকবে। যে মানুষ পছন্দ সেই জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী হবে।
জীবনটা একই রকম নিজের পছন্দ ও মূল্যবোধ অনুযায়ী চলবে। তবে নিজের মূল্যবোধ মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। মানুষ বিভিন্নভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। কেউ জোরে হাসে, কেউ নাচে। মানুষ দুঃখ প্রকাশ করে বিভিন্ন ভাবে। কেউ জোরে কাঁদে, কেউ নীরব গম্ভীর হয়ে যায়। যার যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ আসে, সেটাই থাকবে।
এটা অহেতুক ভয় যে, অন্যেরা আমার আবেগ প্রকাশ করার ধরন দেখে নাখোশ হবে। আসলে কিন্তু উল্টো হয়। সিনেমার বিভিন্ন চরিত্র দেখে মানুষ উল্লসিত হয়। সবাই একই রকম হলে একঘেয়ে লাগে।
আবেগ, অনুভূতি, সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা নিয়েই মানুষের সম্পূর্ণতা। মানুষ যন্ত্রচালিত হতে পারে না। সামাজিকভাবে বাঁচার জন্য অনুভূতিহীন রোবট হতে পারে না। যন্ত্রের মতো অনুকরণে করে বাঁচতে গেলে, মানুষের জীবনটাই বোঝা হয়ে ওঠে। নিজের কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে না।
মানুষ নিজের মতো করে বাঁচতে না পারলে সুখী হতে পারে না। এ কারণে বিখ্যাত তারকারা সবচেয়ে অসুখী। তারকাদের দর্শকদের পছন্দের জীবনযাপন করতে হয়। দর্শক যাতে হাততালি দেয় তাই করতে হয়। অন্যের চুল মাথায় দিয়ে, অন্যের নির্দেশনায় চলে তারকাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেকে মাদকাসক্ত হন, কেউ বা আত্মহত্যাও করেন।
নিজের জীবন যাপিত হতে হবে নিজের নির্দেশনায়, নিজের পরিচালনায়, নিজের প্রশাসনে। এতেই আত্মতুষ্টি ও এতেই সুখ। নিজের মতো জীবনযাপন সব সময় সহজ নয়, তবে চলার স্বাধীনতা আছে।
জীবনের লঞ্চগুলো নিজের ঠিক করতে হবে। পথও নিজের হতে হবে। ধনী হতে আমাজানের জেফ বেজোস হতে হবে না, অমিতাভের মতো অভিনয় করে অভিনেতা হতে হবে না, গায়ক হতে মাইকেল জ্যাকসনের মতো গান গাইতে হবে না। যেটাকে বলা হয়, প্রোগ্রামের ভাষায় বলা হয় কনফিগারেশন, তা জীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নিজের প্রয়োজন ও যোগ্যতার ওপর নিজের পথ ও পদ্ধতি নির্ভর করে বিল গেটসের মতো করে করতে গেলে হোঁচট খেতে হবে।
নিজের মতো চলতে হলে আত্মবিশ্বাস ও নিজের প্রতি আস্থা থাকতে হয়। না থাকলে তৈরি করতে হয়। তাতেই আসে সফলতা ও শান্তি।